বাঙালীও ব‍্যবসায় সফল : গ্ৰাম থেকে শহরে গিয়ে দেখিয়েছেন প্রয়াত কেডি পাল

29th July 2021 4:10 pm বর্ধমান
বাঙালীও ব‍্যবসায় সফল : গ্ৰাম থেকে শহরে গিয়ে দেখিয়েছেন প্রয়াত কেডি পাল


দিব‍্যেন্দু দাস ( কামারকিতা ) :  আজ বাঙালীর অন্যতম Business icon শ্রদ্ধেয় "কৃষ্ণদাস পালের" ৮১তম জন্মবার্ষিকী ।। 

কে ডি পাল বলেই সকলে চেনে তাঁকে। কিন্তু নাম তাঁর কৃষ্ণদাস পাল। ১৯৪০ সালে ২৯শে জুলাই বর্ধমান জেলার কামারকিতা  গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবার নাম পূর্ণ চন্দ্র পাল, জননী অপর্ণা। পাঁচ ভাই, তিন বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। কামারিতার প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তাঁর বিদ্যারম্ভ। বাবা বিয়ের আংটি বিক্রী করে কলকাতায় এসেছিলেন ভাগ্যান্বেষণে। শহরে পৌঁছে গঙ্গায় ডুব দিয়ে প্রার্থনা করেন,'যাই করি তাতেই যেন সেরা হতে পারি।'  শুরুতে অল্প মাইনের একটা চাকরী পেয়েছিলেন কলকাতার এক বেসরকারী অফিসে। তারপর সেটা ছেড়ে বড়বাজারের একটা ছোট্ট ঘর থেকে শুরু হল পূর্ণচন্দ্রের ট্রেডিং ও ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ। স্বাধীন ব্যবসা কিন্তু অতি সামান্য । পরিবারের সকলকে নিয়ে এসে তুল্লেন শ্যামপুকুরের এক ঘরের এক আস্তানায়। কৃষ্ণদাস ভর্তি হলেন কাছেই শ্যামবাজার এ. ভি স্কুলে। পড়াশুনার জায়গার অভাব, তাই তিনি পড়াশুনা করতেন টিনের রান্নাঘরে।

অল্প বয়স থেকে ব্যাবসার কাজে বাবাকে সাহায্য করতেন কৃষ্ণদাস। প্রথমে সাইকেল ভ্যানে  এ্যালপাইন দুধ পৌঁছে দিতেন বাড়ি বাড়ি। আর‌ও বড় হলে মোটর ভ্যানে বড় বড় দোকানে নানান ধরনের মাল পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এদিকে আবার সেল্স ট্যাক্স রেজিস্টার লেখার দায়িত্ব‌ও ছিল তাঁর উপর। পড়াশুনাতে ও ভালো বলে নাম হয়েছে স্কুলে। তাই ছোট ভাই বোনেদের লেখাপড়ায় সাহায্য করার দায়িত্ব‌ও ছিল তাঁর কাঁধে। এই করতে করতেই এ. ভি স্কুল ছাড়িয়ে ইংরাজী অনার্স পড়তে ঢুকলেন সিটি কলেজে।  পরপর দু বছর কলেজ ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন P.S.U র সমর্থনে। বি.এর পর এম.এ ও আইন পড়া শুরু হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু এম.এ পরীক্ষার পর পূর্ণচন্দ্র আর অপেক্ষা না করে ছেলের বিয়ে দিয়ে দিলেন অজিত পাঁজার এক আত্মীয় কন্যা মঞ্জুশ্রীর সঙ্গে। তাঁর ব্যবসার অবস্থা ততদিনে বেশ পোক্ত হয়ে উঠেছে। শ্যামপুকুর স্ট্রীটেই দেড় কাঠা জমির উপর ছোট্ট একটা বাড়ি করেছেন। তবু বাবার উপর চাপ না বাড়িয়ে কৃষ্ণদাস চাকরী নিলেন হাওড়ার অক্ষয় শিক্ষায়তন স্কুলে। ইতিমধ্যে এম.এ ও আইন দুটি পরীক্ষার‌ই রেজাল্ট বেড়িয়েছে। দুটোতেই কৃতকার্য। মন চাইল ওকালতি করতে । তাই কিছুদিন হাইকোর্টে ওকালতীও করেন। ততদিনে পূর্ণচন্দ্রের ব্যবসা আর‌ও বড় হয়েছে। তিনি ছেলেকে পুরোপুরি টেনে নিলেন ব্যবসার কাজে।
১৯৭৩ সালে পূর্ণচন্দ্র তাঁর সমস্ত ব্যবসা ছেলেদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। '৭৪ সালে ছেলেরা সব লেগে পড়লেন যে যার নিজের ব্যবসায়। কৃষ্ণদাস পেয়েছিলেন ডিস্ট্রিবিউশন। তিনটে মোটে কোম্পানী। নেসলে, ল্যাকমে আর ক্যালকাটা কেমিক্যালস। মাসে ব্যবসা হয় তিন লাখ টাকার মত। লাভ মাসে হাজার তিনেক টাকার মত। তাতেই চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু কে ডি লেগে পড়লেন ব্যবসা বাড়াতে। ডিস্ট্রিবিউশন নিলেন ব্রিটানিয়া, ডাবুর, হরলিক্স, প্রভৃতি কোম্পানীর। ব্যবসা হু হু করে বাড়তে লাগল।

এর মধ্যে ক্যালকাটা কেমিক্যালসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সমরেশচন্দ্র দাশগুপ্ত মারা গেলেন। তাঁর স্ত্রী লেখা দাশগুপ্ত কে ডিকে বল্লেন তিনি যদি ক্যালক্যাটা কেমিক্যালসের বেশীর ভাগ শেয়ার কিনে নেন তাহলে  তাঁরা দুজনে মিলে কোম্পানী চালাবেন। তাঁর কথায় ভুলে কৃষ্ণদাস ২৮% শেয়ার কিনে নিলেন। ইতিমধ্যে রেখাদেবী শ ওয়ালেসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। কে ডিকে বল্লেন তাঁর বেশির ভাগ শেয়ার শাহ ওয়ালেসের শ্রী এস. পি আচার্যকে বেচে দিতে। কে ডি রাজী হলেননা। শুরু হল আইনী লড়াই। রেখাদেবী কে. ডির ক্যালক্যাটা কেমিক্যালসের ডিস্ট্রিবিউটর শিপ কেড়ে নিলেন। এইসময় পশ্চিম বঙ্গের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এগিয়ে এলেন। জ্যোতি বাবুর বিচক্ষণতা ও সৌজন্যে মুগ্ধ কৃষ্ণদাসের কথা অনুযায়ী জ্যোতি বসু রেখা দেবীকে বাধ্য করলেন কে ডির ডিস্ট্রিবিউটর শীপ ফিরিয়ে দিতে।
এরপর রেখা দেবী ধরলেন জার্মান কোম্পানী হেঙ্কেলকে। বিস্তর আলাপ আলোচনার পর হেঙ্কেল তাঁর ২৮% শেয়ারের জন্য ৭ কোটী টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলেন। কৃষ্ণদাস রাজী হলেন। কিন্তু ঐ টাকা তিনি পুরানো ব্যবসায় ঢালতে চাইলেন না। অনেক ভেবে ঐ টাকা দিয়েই তিনি ২০০০ সালে তিনি তৈরী করলেন 'বিস্ক ফার্ম বিস্কুট' তৈরীর কোম্পানী "সাজ ফুড প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড"। তার তিন ছেলে মেয়ে শর্মিষ্ঠা, অর্পণ, আর জয়িতার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে রাখা হল এই নতুন কোম্পানীর নাম।

প্রথম ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কোম্পানীর হাল ধরলেন কৃষ্ণদাসের বড় জামাই বিজয় সিং। ব্রিট্যানিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট (টেকনীক্যাল) পদ থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন শ্রী অরূপ গুহ। তাঁকেও যুক্ত করা হল বিস্ক ফার্মের সঙ্গে। প্রথমেই ঠিক হয়েছিল বিস্ক ফার্ম যে সব জিনিস তৈরী করবে সে গুলি হবে বাজার থেকে আলাদা। প্রথম কারখানা হল উলূবেড়িয়ার 'ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ পার্ক' এ। এরপর হাওড়ার ধুলাগড়ের সুধা রাস্ক ফুড পার্কে। পরবর্তী কালে শিলিগুড়ির 'জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির' ফুডপার্কে ৮ একর জমির ওপর তৈরী হল আর‌ও দুটি ইউনিট। ২০০৯ সাল থেকে 'জাস্ট বেকড' নামে খুচরো দোকান‌ও চালু হল। বর্তমানে  ৩৮ টি জাস্ট বেকড চালু আছে। লক্ষ্য হল এটাকে ১০০ তে নিয়ে যাওয়া।
সমস্ত ব্যবসাকে নিয়ে আসা হয়েছে  কে ডির মা অপর্ণার নামের ছাতার তলায়। দুটো অংশ ট্রেডিং আর ম্যানূফ্যাকচারিং। এর মধ্যে ট্রৈডিং থেকে ব্যবসা হয় বছরে ৭০০ কোটি টাকা। আর ম্যানুফ্যাকচারিং অর্থাৎ বিস্ক ফার্মের বিস্কুট, কুকিজ, কেক, ওয়েফার প্রভৃতি ফুড প্রোডাক্ট ব্যবসা দেয় বছরে ১০০০ কোটি টাকার উপর।
এ ছাড়া শিলিগুড়িতে একটা প্যাকেজিং ইউনিট খোলা হয়েছে যার বাৎসরিক ব্যবসা বর্তমানে বছরে ৫০ কোটি টাকার উপর।

বেকারী ব্যবসায় বিস্ক ফার্মের স্থান এখন চতুর্থ।  প্রথম স্থান দখল করাই কৃষ্ণদাসের লক্ষ্য। তবে একটা কথা ব্রিট্যানিয়া, পার্লে  যেমন দেশের সব জায়গায় পাওয়া যায়, বিস্ক ফার্ম পাওয়া যায় না। যাতে ভারতের সর্বত্র পাওয়া যায় সেই লক্ষ্যে নাগপুরে একটা কারখানা খোলা হয়েছে।
পরের লক্ষ্য বেঙ্গালুরু। সেখানে কনকপুরায় ৮ একর জমি কেনা হয়েছে। কারখানা প্রায় শেষ। এই কারখানায় উৎপাদন শুরু হলেই ভারতের সর্বত্র পাওয়া যাবে বাঙ্গালীর বিস্ক ফার্ম, ব্রিট্যানিয়াকে হারিয়ে প্রথম স্থান অধিকার‌ই যার লক্ষ‍্য ।





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।